চন্দনের দ্বীপ হংকং : সমৃদ্ধ আর্থিক কেন্দ্র, শপিং স্বর্গ ও পরিবহন বন্দর হিসেবে হংকং বিশ্বখ্যাত। চীনের দুইটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের একটি হল এটি। ২৬০ টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি পার্ল রিভার ডেল্টার পূর্ব দিকে অবস্থিত। এখানকার পণ্যদ্রব্য শুল্কমুক্ত হওয়ার কারণে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা শহরটির প্রতি আকৃষ্ট হন। প্রতি বছর প্রায় ৭ মিলিয়ন পর্যটক হংকং ভ্রমণ করে। এক সময় এখানে প্রচুর চন্দনগাছ জন্মাত, যে কারণে লোকজন হংকংকে বলে চন্দনের দ্বীপ।

[ চন্দনের দ্বীপ হংকং ]
এখানকার প্রধান আকর্ষণীয় স্থান হল ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয়। রাতে দেখা যায় এই পোতাশ্রয়ের অপূর্ব একটি রূপ। কোন পর্যটক যদি এই ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয়ের দুই তীরে না হাঁটেন তবে তার হংকং আসাই বৃথা। অত্যাধুনিক শহরের রূপ দেখতে দেখতে সমুদ্রের বাতাসের ভেতর দিয়ে হাঁটতে থাকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দু’তলার স্টার ফেরিতে বসেও ভিক্টোরিয়ার দু’পাশের সুন্দর ভবন ও পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করার ব্যবস্থা আছে। বসন্তকালে হংকংয়ের লোকেরা চীনাদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বসন্ত উৎসব উদযাপন করতে ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয় কাছে আতশবাজি পোড়ায়। সেটাও এক অপূর্ব দৃশ্য।
ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয়ের পাশেই রয়েছে ভিক্টোরিয়া পিক।
এই এলাকায় জন্ম হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত অভিনেতা জ্যাকি চ্যানের। এই জায়গাটি বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখান থেকে পুরো হংকং শহর এবং ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয় দেখা যায়। এখানে রাতের বেলা সাগরের বুকে নৌযানের আলো তারার মতো চোখ জুড়ায়। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ধারক ভিক্টোরিয়া পিকের জমি তাই সোনার মতোই দামি। আর এটি কেনার জন্য বিশ্বের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাড়াকাড়ি লেগেই থাকে। ভিক্টোরিয়া পিকের রয়েছে এটা বহু উঁচু এক টাওয়ার। এতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ডেক। যেখানে আছে রেস্টুরেন্ট, কফিসপ, পোস্ট অফিস ইত্যাদি।

রেপুল সেবে হল হংকংয়ের আকর্ষণীয় এক সমুদ্র সৈকত। এখানে রয়েছে দুটি বিশাল মূর্তি। যা এ সৈকতকে করেছে আরও আকর্ষণীয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস মূর্তি দুটির একটি অপরাধীদের দমন করে। দ্বিতীয়টি জেলেদেরকে মাছ ধরার সময় উত্তাল সমুদ্র থেকে রক্ষা করে।

এখানকার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে কাউলুন শহরে অবস্থিত সেপস মিউজিয়াম। এটা পৃথিবীর বৃহৎ জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত জাদুঘরগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়া রয়েছে ওয়ার্ল্ড সিটি বা দেয়ালের শহর পার্ক। চাইনিজ বিবাহের অনুষ্ঠান এবং হরেক রকমের বিখ্যাত চাইনিজ খাবার, স্নেক্স ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত ‘সুংডায় নেস্ট ভিলেজ’। টাটকা সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য খাবারের জন্য ‘লেইয়্যমুন’। বৃহৎ আধুনিক মন্দির ‘ওংটাইসিন টেম্পল’, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হংকং আইল্যান্ডের টিওয়ার মিউজিয়াম, ম্যান মো টেম্পল নুনডেগান, লাভাস রক, স্টেনলে, এবেরডীন, শেন জেন নগরী বেড়াবার জন্য আকর্ষণীয় স্থান।
ঢাকা থেকে হংকং যাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে বিমানের একটি ও ড্রাগন এয়ারের ৭টি ফ্লাইট রয়েছে।

হংকংয়ে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল আছে। বাজেট অনুযায়ী এর যে কোন একটা বেছে নেওয়া যায়। চলাফেরার জন্য রয়েছে বাস, ট্রেন, মেট্রো, ট্রাম আর ট্যাক্সি। মাঝারি খরচে থাকা-খাওয়া বাবদ দিনে এক হাজার টাকা হলেই ভালোভাবে ঘুরে দেখা যায় হংকং। কেনাকাটার জন্য এখানে রয়েছে শুল্কমুক্ত বিশাল পণ্য সম্ভার।
আরও পড়ুন: