Site icon Tourism Gurukul [ পর্যটন গুরুকুল ] GOLN

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ নিদর্শন জাফলং নদী

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ নিদর্শন জাফলং নদী

অপরূপ জাফলং নদী

জাফলং নদী বা ডাউকি নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৮৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক জাফলং-ডাউকি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৩০। উমঙ্গট নদীর আরেক নাম ডাউকি  জাফলং। ডাউকি নদী খাসী এবং জয়ন্তিয়া অঞ্চল দিয়ে বয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। স্বচ্ছ কাঁচের মতো এই নদীর পানি দেখলে নদী ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করবে না। নদীতে নৌবিহার করতে করতে কীভাবে যে দিন কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না।

সিলেটের জাফলং জিরো পয়েন্টে জাফলং-ডাউকি নদী
ছবি: উইকিপিডিয়া

 

ডাউকি – জাফলং নদী

এটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের ওম নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এ উপজেলার সারিগোয়াইন নদীতে পতিত হয়েছে।

এর দৈর্ঘ্য ১০.৭৫ কিমি। প্রস্থ ১৫০ মিটার। অববাহিকার আয়তন ৪.১৪ বর্গকিমি।

খরস্রোতা ডাউকি নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মারি নদী নাম ধারণ করে জাফলংয়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

নদীটি সরাসরি হিমালয় পর্বত থেকে নেমে এসে ভারতের ডাউকি অঞ্চল হয়ে বাংলাদেশের জাফলংয়ে প্রবেশ করেছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ নিদর্শন ডাউকি – জাফলং নদী। জাফলংয়ে এটি সমতলভূমিতে হলেও কয়েকশ মিটার পেছনে এটি পাহাড়ের আঁকাবাঁকা দুর্গম পথ অতিক্রম করেছে। এই নদীর উপর ডাউকিতে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ আছে।

নদীর প্রবাহ সারাবছরই থাকে। শুষ্ক মৌসুমে ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবাহ নেমে গিয়ে ০.৬৫ ঘনমিটার/সেকেন্ডে দাঁড়ায়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে জুলাইয়ে তা বৃদ্বিপেয়ে ২৬.০৮ ঘনমিটার/সেকেন্ড পর্যন্ত হয়। এই নদীর তীরে ব্যাংক রিভেট্মেন্টর দৈর্ঘ্য ২৩৫৮ মিটার।

নদীটিতে জোয়ার-ভাটা নেই। সাধারণত বন্যায় পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়।

উমগট নদী থেকে ডাউকি বা জাফলং নদী

ভারতের আসামের উমগট নদী থেকে পিয়াইন নদীর উৎপত্তি। পার্বত্য আসাম থেকে উদ্ভূত হয়ে উমগট নদী দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে সিলেট জেলার শনগ্রাম বর্ডার পোস্টের কাছ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রবেশ পথেই উমগট দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রধান শাখাটি পিয়াইন নামে এবং অন্য শাখাটি ডাউকি বা জাফলং নামে প্রবাহিত হয়।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নদীটির গতিপথ কিছুটা সর্পিল। সীমানার অভ্যন্তরে প্রবেশের পর এটি দক্ষিণ-পশ্চিম অভিমুখী সুনামগঞ্জ জেলার দিকে প্রবাহিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের সময় উজানের জলনিষ্কাশন অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে নদীতে প্রবাহ অত্যন্ত বেড়ে যায় এবং শিলং মালভূমির পাহাড়গুলো থেকে স্রোতের সঙ্গে বড় বড় গন্ডশিলা (boulder) পরিবাহিত হয়ে আসে। নদীবাহিত এসব গন্ডশিলা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংগ্রহ করে নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়।
নির্মাণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় গন্ডশিলা সরবরাহ করে নদীটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উজান থেকে নিয়মিত পানি সরবরাহের কারণে নদীর পানি খুবই স্বচ্ছ।

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি লীলাভূমি

নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই নদী ও এর আশপাশের এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি লীলাভূমি। এ নদীর পানি এতই স্বচ্ছ যে জলের নীচে যে প্রাণীগুলি সংসার পেতে বসে আছে তাদের রোজনামচা দেখা যায় খালি চোখে।

আবর্জনাপূর্ণ নদী জলাশয় দেখে দেখে যারা অভ্যস্ত তাঁরা জাফলং নদীতে নৌবিহার করলে চমকে উঠতে পারেন। সেখানকার ছবি ক্যামেরাবন্দি করলেও চমকে উঠতে পারেন আপনি। এডিটিং ছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন ছবি উঠবে যে ভাবতেই পারবেন না। মনে হবে প্রকৃতি যেন এখানে সব সময়ই ফোটোজেনিক।

সত্যি বলতে কি জাফলং ভ্রমণের কোনও গাইডলাইন এঁকে দেওয়া যায় না। এই ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণ এই নদীর নির্মলতা। নদীতে নৌবিহার করতে করতে মনে হবে যেন শূন্যে ভাসছেন। এতই স্বচ্ছ তার জল। পাহাড়র ঘেরা নদী এবং শহরের বর্ণনা দেওয়ার বোধহয় নতুন করে প্রয়োজন হয় না। কিন্তু নদীর সৌন্দর্যের কোনও তুলনাই হয় না। এই নদীতে নৌবিহার করেই সারাটা দিন কাটিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

এই নদী জাফলংয়ের স্থানীয় নৌযোগাযোগের একটি মাধ্যমও বটে। প্রতিবছর বিশেষ করে, শীতকালে এখানে হাজার হাজার মানুষ বনভোজন ও নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে।

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ভ্রমণ স্থান

ডাউকি ব্রিজ, আমগট নদীর উপর নির্মিত একটি ঝুলন্ত সেতু। এটা ব্রিটিশদের দ্বারা ১৯৩২ সালে নির্মিত হয়েছিল।( যদিও সেতুটি বাংলাদেশের সীমানায় নয়), সংরামপূঞ্জি, বল্লাঘাট পিকনিক স্পট

 

সীমান্ত-ফাঁড়ি
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অল্প ক’টি স্থল সীমান্ত পারাপারের মধ্যে ডাউকি-তামাবিল একটি। এটি মূলত বাংলাদেশে কয়লা পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। পিক-মৌসুমে প্রতিদিন ৫০০ এর মতো ট্রাক এই স্থল বন্দর অতিক্রম করে।

 

ডাউকি নদীর তীরবর্তী বাজার
জাফলং বাজার, লন্ডন বাজার

জাফলং নদী বা ডাউকি নদী

তথ্যসূত্র:

Exit mobile version