তামাবিল (Tamabil) হচ্ছে সিলেটের সীমান্তবর্তী একটি এলাকা, যা জাফলং যাবার ৪ কিলোমিটার আগে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত। এখানে থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়, ঝর্ণা সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখা যায়। তাই অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যে বিমোহিত হতে প্রচুর দর্শনার্থী তামাবিল ঘুরতে আসেন।
তামাবিলে যাবার পথের বাকেবাকে বিশাল পাহাড় ও ঝর্ণার এক পলক দর্শন তামাবিল ভ্রমণের আগ্রহ বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। প্রকৃতির আয়োজন ছাড়াও তামাবিলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আছে স্বচ্ছ পানির লেক, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং জৈন্তা হিল রিসোর্ট। তামাবিলের সবচেয়ে কাছের নদীটির নাম তাইরঙ্গল।

ছবি: উইকিপিডিয়া
তামাবিলের দর্শনীয় স্থান
সবুজ পাহাড় আর টিলায় ঘেরা সিলেট জেলা প্রকৃতির রূপে অনন্য। সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটকে সুন্দরী শ্রীভূমি আখ্যা দিয়েছিলেন। সিলেটের তামাবিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত তেমনি এক স্থানের নাম । তামাবিলের অপর প্রান্তের ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকী বাজার। তামাবিল থেকে মেঘালয় রাজ্যের শিলং পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
তামাবিল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে সরাসরি ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পাহাড়, পর্বত, ঝর্ণা, জলপ্রপাত দেখা যায়। সীমান্তের ওপারে অনেক গুলো জলপ্রপাত রয়েছে এই জলপ্রপাত গুলো বিকাল বেলা ও গোধূলির সময় দেখতে চমৎকার লাগে। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমায় তামাবিল সীমান্তে। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের শেষ বাড়ি, যা বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে অবস্থিত, এবং জৈন্তা হিল রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত।
ছবি: উইকিপিডিয়া
শীতের সময় শিলং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বলে প্রচুর ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। তাপমাত্রা সিলেট শহর বা জেলার অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক কম। আশেপাশে রয়েছে অনেক চা বাগান। জাফলং যাওয়ার পথে তামাবিল পয়েন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

ছবি: উইকিপিডিয়া
তামাবিল স্থল বন্দর বা জিরো পয়েন্ট
তামাবিল স্থল শুল্ক বন্দর দিয়ে কয়লা ও সাদা পাথর সহ অন্যান্য পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হয় যা সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থলপথ এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়

ছবি: উইকিপিডিয়া
তামাবিল কোথায় অবস্থিত?
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তে তামাবিল অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তামাবিল হচ্ছে সিলেট-শিলং সড়কের একটি সীমান্ত চৌকি। মেঘালয়ের রাজধানী শিলিং থেকে এর দুরত্ব ৮২ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে ৩০০ কিলোমিটার ।

তামাবিল কখন যাবেন?
কিভাবে তামাবিল যাওয়া যায়?
তামাবিল যেতে চাইলে প্রথমে সিলেটে আসতে হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেটে আসা যায়। রাজধানী ঢাকা হতে বাস, ট্রেন কিংবা আকাশপথে সিলেট যাওয়া যায়।। তবে বাসের চেয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করা বেশ আরামদায়ক। ট্রেনে যেতে চায়লে কমলাপুর রেলস্টেশন গিয়ে কামরা ভাড়া করে গেলে আরামে যাওয়া যায়। বাসে গেলে গ্রীনল্যান্ড ও সোহাগ পরিবহনে সিলেটে ভ্রমণ করা যায়। এছাড়া প্রতিদিন একাধিক ফ্লাইট রয়েছে সিলেটের।
ঢাকা থেকে সিলেট: ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ এবং মহাখালি বাস টার্মিনাল সিলেটগামী বিভিন্ন এসি/নন-এসিবাস ছেড়ে যায়৷ নন-এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সাধারণত ৬ ঘন্টা সময় লাগে।
ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত কিংবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে সিলেট যেতে পারবেন। ট্রেনের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য শ্রেণিভেদে ৩২০ থেকে ১১৪৯ টাকা। ট্রেনে চড়ে সিলেট যেতে ৭-৮ ঘন্টা সময় লাগে।
ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ক্লাস অনুযায়ী জনপ্রতি বিমান ভাড়া ৩,৫০০-১০,০০০ টাকা হয়ে থাকে।
সিলেট থেকে তামাবিল: লোকাল বাসে তামাবিল যেতে চাইলে সিলেট শহরের শিবগঞ্জে আসুন সেখান থেকে জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়ায় তামাবিল যেতে পারবেন। সিএনজি বা অটোরিকশায় তামাবিল যেতে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা ভাড়া লাগবে। আর মাইক্রোবাস সারাদিনের জন্যে রিজার্ভ নিতে ভাড়া লাগবে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। এছাড়া সিলেট নগরীর যেকোন স্থান থেকে জাফলংগামী যানবাহনে তামাবিল যেতে পারবেন।
যাতায়াতের মাধ্যম: বাস, মাইক্রোবাস, জীপ, সিএনজি ও ট্যাক্সি।

কোথায় থাকবেন?
তামাবিলে জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট নামে একটি ভাল মানের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া জাফলংয়ের গেস্ট হাউজ ও জেলা পরিষদের বাংলোতে আগেই বুকিং দিয়ে থাকতে পারবেন। এছাড়া সিলেটের লালাবাজার ও দরগা রোডে কম খরচে থাকার বেশকিছু মানসম্মত রেস্ট হাউস রয়েছে৷
গ্যালারি
আশেপাশের আকর্ষণ