ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত পিয়াইন নদী (Piyain River) বা পিয়াইন গাং নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এই নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার মধ্যে দিয়ে বহমান। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক পিয়াইন নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৪৯।
এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৫ কিমি। জাফলং থেকে ছাতক পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিমি পথে এর ২২টি বাঁক রয়েছে। পাহাড়িয়া নদী বলে পিয়াইন-এ পাহাড়ি ঢল নামে এবং আকস্মিক বন্যা হয়ে থাকে। ঢল বা বন্যার পানির সাথে উজান থেকে প্রচুর পরিমাণে পাথরও আসে।
ছবি: উইকিপিডিয়া
উৎপত্তি ও প্রবাহ
পিয়াইন ভারতের আসামের ওম বা উমগট নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ভারতের আসাম রাজ্যের জৈন্তিয়া পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে উমগট নদী দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের সিলেট জেলার ছাতকের উত্তরে শনগ্রাম সীমান্তের কাছে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।প্রবেশ পথেই উমগট দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রধান শাখাটি পিয়াইন নামে এবং অন্য শাখাটি ডাউকি বা জাফলং নামে প্রবাহিত হয়।
সুরমা নদীর এই উপনদীটি বাংলাদেশে প্রবেশের পর আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর পশ্চিম দিকে প্রায় ৭ কিমি প্রবাহিত হয়ে প্রতাপপুর বর্ডার আউটপোস্টের কাছে গতি কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে ছাতকের কাছে সুরমা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। প্রতাপপুর বর্ডার আউটপোস্ট বা রত্নের ভাঙ্গা-এর কাছে নদীটি তিন শাখায় বিভক্ত। শাখাগুলি হচ্ছে- পুরানো পিয়াইন, পবিত্রডালা ও নয়াডালা। বর্তমানে পিয়াইন নদীর মূল প্রবাহ নয়াডালার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাটিতে শারিগোয়াইনের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। পুরানো পিয়াইন এবং পবিত্রডালা শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে জলপ্রবাহ লাভ করে থাকে।
ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় পিয়াইন
পিয়াইন শুধু বাংলাদেশিদের কাছে নয়, বিদেশি ভ্রমণ পিয়াসুদের কাছেও এটির গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ গন্তব্য। বিশেষ করে প্রকৃতির কন্যা জাফলং, বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট ও সৌন্দর্যের রাণী খ্যাত জাফলংকে কেন্দ্র করে এ নদী পর্যটকদের কাছে অনেক পরিচিত নাম। মূলত: পিয়াইনের তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপই জাফলংকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। এই নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নীরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে।
কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির সাথে পলি মাটি আসায় নদীটি এখন ভরাট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিভিন্ন সময় পিয়াইন নিয়ে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন প্রকল্পই আলোর মুখ দেখেনি। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, নদীটি যদি এখনই সংস্কার করা না হয় তাহলে এটি হারিয়ে যেতে পারে। ফলে এখানকার প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া পাথর উত্তোলনও বন্ধ হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে জাফলংয়ের সৌন্দর্য। হাজার হাজার শ্রমজীবী লোক বেকার হয়ে পড়বে। ফলে পাহাড়ি ঢলে ফসল ও জনপদ বিনষ্ট, জাফলং নদীর গতিপথ পরিবর্তনসহ ভাঙন তীব্র হওয়া, পাথর ফুরিয়ে যাওয়াসহ অদূর ভবিষ্যতে অনুন্নত এই জনপদে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা করছে সবাই।
সিলেট মহানগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং-এর অবস্থান। মারি নদী ও কাশিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং অবস্থিত। এ নদীর উৎপত্তি হিমালয় থেকে।
স্রোতে লাখ লাখ টন পাথর চলে আসে এই নদীতে। পাথরের ব্যবহার বাড়ার পর ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে নৌ পথে জাফলং আসতে শুরু করেন। পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকায় গড়ে উঠে নতুন জনবসতিও। পাথর উত্তোলনের জন্য বিখ্যাত এই নদীকে ঘিরে চলে কয়েক হাজার পরিবারের দিনাতিপাত। এই পিয়াইন থেকেই সিংহভাগ পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
সারাবছর এই নদী থেকে হাজার হাজার টন পাথর উত্তোলন করা হয়। কিন্ত এই পাথরের যেন শেষ নেই। এই পাথর উত্তোলন করে জীবন নির্বাহ করছে শত শত পরিবার। এখানে যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে আসেন তাদের মাঝে এই পাথর উত্তোলনের দৃশ্যটাও একটা উপভোগ্য বিষয়।
পিয়াইন নদীর তীরবর্তী বাজার সমূহ
রোস্তম পুর, কোম্পানীগঞ্জ, সংগ্রামপুঞ্জি এবং প্রতাপপুর বিডিআর ক্যাম্প
গ্যালারি
আশেপাশের আকর্ষণ