বরগুনা জেলার দর্শনীয় স্থান

বরগুনা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত ও প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত বরগুনা জেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ সাগরের হাতছানি আর অন্যদিকে অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ যে কোন পর্যটকে মুগ্ধ করে। বরগুনা জেলায় দেখতে পাবেন – মোঘল আমলে স্হাপিত বেতাগীতে বিবি চিনি মসজিদ, তালতলীর বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ একাডেমী, পাথরঘাটার হড়িণঘাটার লালদিয়া বন ও সমুদ্রসৈকত, সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত ও সোনাকাটা ইকোপার্ক, সুন্দরবনের অংশ ফাতরার বন, বিহঙ্গ দ্বীপ বা ধানসিড় চর, শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সহ সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য।

 

টেংরাগিরি ইকোপার্ক, সোনাকাটা/সোনারচর

বরগুনা জেলা সদর থেকে ৩২ কিঃ মিঃ দক্ষিণে আমতলী উপজেলার সোনাকাটা বঙ্গোপসাগরের একটি সমুদ্র সৈকত । মোহনা ঘেষে আছে সবুজ বেষ্টনী । সোনাকাটার সমুদ্র সৈকতটি অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আপন মহিমায় ভাস্বর । জোয়ারের সময় সবুজ বেষ্টনী ৭/৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় । ফলে এক অভূতপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় । এ সমুদ্র সৈকতে নিরাপদ স্নান, সান বাথসহ একই জায়গা থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায় । এ সৈকত থেকে নৌযানে সমুদ্র ভ্রমণ সম্ভব । সৈকতে যাওয়ার পথ গভীর বনের মধ্য দিয়ে হওয়ায় এর নৈসর্গিক সৌন্দর্যও অতুলনীয় । সৈকতে যাওয়ার পথে গহীন বনের দুই দিকে একই থানার অন্তর্গত সখিনা ও নিশানবাড়ীয়া দুইটি ফরেস্ট বিট অফিস রয়েছে , যাকে কেন্দ্র করে নয়নাভিরাম ইকো পার্ক গড়ে তোলা সম্ভব।

অবস্থান

সোনাকাটা

কিভাবে যাওয়া যায়

আমতলী ও তালতলী সড়ক হয়ে তালতলী যাওয়ার পর মোটর সাইকেল যোগে অতি সহজেই গন্তব্য স্হলে যাওয়া যায়।

 

বিবিচিনি শাহী মসজিদ

বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিঃমিঃ দূরে বিবিচিনি ইউনিয়নে এই মসজিদটি অবস্থিত । এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনায় জানা যায়, ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (রঃ) পারস্য থেকে এই এলাকায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে বিবিচিনিতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তাঁর কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবির নামানুসারে বিবিচিনি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে এবং মসজিদটির নাম রাখা হয়ছে বিবিচিনি শাহী মসজিদ ।

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট ,দেয়ালগুলো ৬ ফুট চওড়া । মসজিদের ইটগুলো মোঘল আমলের ইটের মাপের সমান। সমতল ভূমি হতে মসজিদের স্থানটি ৩০ ফুট টিলার উপর অবস্থিত । তার উপরও প্রায় ২৫ ফুট উচ্চ মসজিদ গৃহ ।

মসজিদের পাশে রয়েছে ৩ টি কবর । যা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ধর্মী । কবর ৩ টি সাধারণ কবরের ন্যায় হলেও লম্বা ১৫/১৬ হাত । এলাকাবাসীর জনা মতে সেখানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ্ (র:) এবং তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবি । আরো জানা যায়, সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ্ (র:) পরলোকগমন করেন এবং মসজিদের পার্শ্বে তাকে সমাহিত করা হয়।

উল্লেখ্য প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর কর্তৃক মসজিদটি তালিকাভূক্ত করে এর সংস্কার করা হয়েছে ।

কিভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা/ দেশের যে কোন জেলা থেকে লঞ্চ অথবা বাস যোগে বরগুনা জেলা বাস স্টান্ড নামতে হবে। বাস স্টান্ড হতে বাসে / মোটর সাইকেল বেতাগী উপজেলাতে যেতে হবে। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিঃমিঃ দূরে মোটর সাইকেল যোগে বিবিচিনি ইউনিয়নে এসে রিক্সা যোগে বিবি চিনি মসজিদে আসা যাবে ।

 

বিহঙ্গ দ্বীপ

কিভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা সদরঘাট থেকে বরগুনার লঞ্চেও কাকচিঁড়া ঘাটে নেমে গাড়িতে যেতে হবে পাথরঘাটা সদরে তারপর রূইতা গ্রামে, রূইতা বটতলা থেকে ট্রলার ও নৌকা ভাড়া করে আসা যাবে বিহঙ্গ দ্বীপে।।

 

বুকাবুনিয়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের অধীনে সংঘটিত যুদ্ধে সাব সেক্টর হেড কোয়ার্টার ছিল বামন উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন। বুকাবুনিয়া ও বামনা উপজেলা থেকেই মূলত মুক্তিযোদ্ধারা এই জেলায় যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সন্মান প্রদর্শনে ২০১৩ সালে ১৯ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুকাবুনিয়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন। .

 

মোহনা পর্যটন কেন্দ্র

পালের বালিয়াতলী, বরগুনা সদর, বরগুনা

কিভাবে যাওয়া যায়

বরগুনা পৌরসভা ভবন থেকে বাসে পরীরখাল যেতে হবে।সেখানে থেকে প্রতি দশ/বিশ মিনিট পর পর অটোরিক্সা ছাড়ে যা দিয়ে পালের বালিয়াতলী যাওয়া যাবে।

এছাড়াও মোটরসাইকেলে বরগুনা সদর থেকে ৪০ মিনিটে গন্তব্যে যাওয়া যাবে।

 

মৎস্য অবতরন এবং পাইকারী মৎস্য বিক্রয় কেন্দ্র

পাথরঘাটা, বরগুনা

কিভাবে যাওয়া যায়

বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলাতে অবস্থিত মৎস্য অবতরন কেন্দ্রতে বাসযোগে অথবা মটর সাইকেলে যোগে খুব সহজেই পৌছে যাবেন।

 

রাখাইন পল্লী

কিভাবে যাওয়া যায়

আমতলী- তালতলী সড়ক হয়ে অতি সহজে তালতলীর রাখাইন পল্লীতে যাওয়া যায়।

 

তালতলীর বৌদ্ধ মন্দির

বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলা ও বরগুনা সদরে রয়েছে রাখাইন পল্লী । রাখাইন পল্লীতে বসবাসরত রাখাইন সম্প্রদায়ের তাঁত শিল্প তথা হস্তশিল্প রাখাইনদের সমৃদ্ধ জীবন বৈচিত্রের আরেক নতুন রূপ । তাদের সম্প্রদায়ের বৈচিত্রময় জীবন সকলকে আকৃষ্ট করে।

 

লালদিয়া বন

বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে লালদিয়ার বন। এ বনের পূর্বে বিশখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী । দুই নদী ও সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে । বন সংলগ্ন পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত । এখানে বিভিন্ন রকমের পাখির কলকাকলি এবং সমুদ্রের গর্জন শুনে পর্যটকরা হবেন বিমোহিত এবং ফিরে আসবেন বারে বারে।

কিভাবে যাওয়া যায়

বরগুনা হতে বাসযোগে পাথরঘাটা যাওয়ার পর মোটর সাইকেলে অতি সহজে লালদিয়া বনে যাওয়া যাবে। এছাড়াও পিরোজপুর হয়ে পাথরঘাটায় যাওয়া যায়।

 

শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত

কিভাবে যাওয়া যায়

বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিমে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় বাসযোগে অথবা মটর সাইকেলে যোগে খুব সহজেই শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে পৌছে যাবেন।

 

সিডর স্মৃতিস্তম্ভ

কিভাবে যাওয়া যায়

২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াল থাবায় বরগুনা জেলা ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সম্মুখীন হয়।বরগুনার প্রায় অধিকাংশ এলাকা প্রচন্ড জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় মৃতদেহ দাফনের জন্য উঁচু ভূমির সংকট দেখা দেয়। এই বিপর্যয়ের মুখে বরগুনা সদরের ১০ নম্বর নলটানা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া গ্রামের উঁচু স্থানে সিডরে প্রাণ হারানো ১৯ টি কবরে ২৯ জনকে সমাধিস্থ করা হয়। সিডরে আক্রান্ত সকল নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে জেলা প্রশাসন বরগুনা কর্তৃক নির্মিত হয় গর্জনবুনিয়া সিডর স্মৃতিস্তম্ভ।

 

হরিন ঘাটা ইকোপার্ক

পাথরঘাটা উপজেলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হরিণঘাটা । এখানে সমুদ্রের কোলঘেষে একটি সুন্দর বনভূমি রয়েছে।

কিভাবে যাওয়া যায়

পাথরঘাটা উপজেলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হরিণঘাটা

হরিণঘাটা বন বা লালদিয়ার চরে আসতে চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সড়ক বা নদীপথে প্রথমে বরগুনা আসতে হবে। সেখান থেকে বাস, টেম্পো বা নৌকায় হরিণঘাটা যেতে পারেন।

 

 

Leave a Comment