Site icon Tourism Gurukul [ পর্যটন গুরুকুল ] GOLN

বর্ধন কুঠি

বর্ধন কুঠি

বর্ধন কুঠি

বর্ধন কুঠি

পুরাকালে পুণ্ড্রবর্ধন, মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালের বরেন্দ্র এবং আজকের বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা গাইবান্ধা জেলার ইতিহাস সাদৃত গোবিন্দগঞ্জ তানা বর্তমানে তার প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক কিছু হারাতে বসেছে। নজির হিসেবে বর্ধন কুটি অন্যতম। বিধ্বস্ত রাজবাড়ীর উন্মুক্ত অংশের বিভিন্ন রকমের সুসজ্জিত ছায়াঘন বৃক্ষ, ফাঁকে ফাঁকে শিল্পীর নিপুণ হস্তে গড়া এককালের দালানকোঠা আর তার অংশবিশেষে গড়ে ওঠা গোবিন্দগঞ্জ কলেজ আজও বর্ধনকুঠির স্মৃতিচিহ্ন বক্ষে ধারণ করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বর্ধন কুঠি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে বর্ধনকুঠির শাসক ছিলেন রাজা হরিনাথ। ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির সময়কালে বর্ধনকুঠির সর্বশেষ রাজা শৈলেশ চন্দ্র বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যান। বর্তমানে এই স্থানটি ইতিহাসের স্বাক্ষর বহন করছে। প্রাচীন কাল থেকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাধীন বর্ধন কুঠিতে তৎকালীন রাজাদের গূরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দলের ঘাঁটি ছিল এখানে।

নামকরণ

অনেকে ধারণা, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বর্ধন কুঁঠিরের প্রাচীন নাম ‘বর্ধন কোট’। এই ঐতিহাসিক স্থানের নাম ‘বর্ধন কোট’ বা বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন কাল-ক্রমে এর নাম পরবর্তীতে ‘বর্ধন কুঠি’ হয়েছে, এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে বের করা বর্তমানে অনেকটা কঠিন হয়ে গিয়েছে। প্রাচীনকালে এই স্থানে বর্ধন নামের একজন শক্তিধর নরপতি বসবাস করতেন এবং তার নামানুসারে এই স্থানের নাম রাখা হয়েছে বর্ধনকোট, যেটি কাল-ক্রমে বর্ধনকুঠিতে রূপ নিয়েছে। নামকরণর ক্ষেত্রে অনেকে এ কথা ও মনে করেন, বর্তমানে যেই স্থানটি বর্ধন কুটি নামে পরিচিত, একসময় সেই স্থানে শক্তিধর বর্ধন বংশের কোন একজন উত্তরসূরি এসে (পরবর্তীতে) স্থায়ী-বসতি তৈরি করেন, আর সেই সময় তাদের বংশীয় নামের সূত্র ধরে বধনকোট বা বদন কুঠি নামে সৃষ্টি হয়।

অবস্থান
প্রাচীন গ্রন্থাদিতে ও বর্ধন কোটের নাম পাওয়া যায়। তবে, মিনহাজ-ই-সিরাজ বর্ণিত চিত্র মর্দান কোট বা বদন কোট এর অবস্থান নির্ণয়ে ঐতিহাসিক মহলে এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মিনহাজ-ই-সিরাজ তার বিখ্যাত গ্রন্থ তবকাত-ই-নাসিরী তে এ রকম বর্ণনা দেন, যা থেকে সহজেই অনুমান করা সম্ভব যে, আজকের বর্ধন কুটিই ইতিহাস প্রসিদ্ধ বদন কোটি বরং তিনি উল্লেখ করেছেন এ নগরের সম্মুখ দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত। অসাধারণ বিশাল দরুন এ নদীকে বাক মতি নামে আখ্যায়িত করা হয় হিন্দু স্থানের মাটিতে যখন এটি প্রবেশ করে তখন এটিকে হিন্দুস্থানি ভাষায় সুমন্দর (সমুদ্র) বলা হয়ে থাকে। বিরাটত্ব, আয়তন ও গভীরতায় এটি গঙ্গ (গঙ্গা) নাদীর চেয়ে তিনগুণ বৃহৎ তার এহেন বর্ণনা ভাবিয়া তোলে যে, বাকমতি নদী আদৌ করতোয়া নদী কি না যদিও জিওগ্রাফী অব বাংলাদেশ তথ্য থেকে জানা যায়, গাইবান্ধার আদি অঞ্চল নদীতে পরিপূর্ণ ছিল। এবং এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলার ইতিহাস গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ সাঙ যখন পুণ্ড্রবর্ধন(মহাস্থান বা মহাস্থানগড়ের সাবেক নাম) এলাকা থেকে পূর্বে উত্তরে কামরূপে যান, সে সময় তাকে একটি বিরাট নদী অতিক্রম করতে হয়।

 

ইতিহাস

এক সমইয়ে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ইদ্রাকপুর পরগানার সদর দফতর ছিলো গোবিন্দগঞ্জের এই বর্ধন কুঠিতে। চতুদর্শ শতকের শেষের সময় রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন দেব বংশীয় এবং পুণ্ড্রবর্ধনের রাজা পরশুরামের বংশধর। রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ থেকে আর্যাবর পর্যন্ত এ পর্যন্ত ১৪৪ জন রাজা বর্ধনকুঠি রাজ্যের শাসন করেছেন, পরবর্তীতে রাজা আর্যাবরের পুত্র রাজা ভগবান এবং ভগবান পুত্র রাজা মনোহর বর্ধন কুঠি শাসনের দায়িত্ব পএছিলেন। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকের সময়ে অর্থাৎ ১৬০১ সালে রাজা আর্যাবরের পুত্র রাজা ভগবান ১৬০১ সালে বর্ধন কুঠির পাশাপাশি রামপুরের বাসুদেব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন, তখন রাজা মানসিংহ বাংলার একজন সুবাদার ছিলেন। ইংরেজদের শাসন আমলে বর্ধন কুঠি জমিদার বাড়ী হিসেবে খ্যাতি পায়। ১৬০৯ সালে রাজা ভগবানের সময়ে সুবাদার ইসলাম খাঁ একজন মানসিংহের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তী ধারাবাহিকভাবে রাজা মনোহরের শিশু পুত্র রঘুনাথের আমলের সময় ১৬৬৯ সালে শাহ্‌ সুজাকে, আওরঙ্গজেবকে ও ১৬৭৫ সালে পুনরায় রঘুনাথের পৌত্র হরিনাথের শাসন কালে প্রবল সার্বভৌম আওরঙ্গজেবকে ক্ষমতার শীর্ষ কেন্দ্র দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। রাজা হরিনাথের প্রপৌত্র রাজা গৌরনাথ কোম্পানির সময়কালে রাজা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। গৌরনাথ ১৭৮১ সালে বর্ধন কুঠিতে তার রাজত্ব চালাতেন। ইংরেজদের ক্ষমতা হিসেবে বেশ খ্যাতি বৃদ্ধির সাথে সাথে বর্ধন কুঠিরের জমিদার পর্যায়ক্রমে রংপুর কালেক্টরেট ও ঘোড়াঘাটকেন্দ্রিক প্রশাসনের অধীনে চলে আসে। ইতিহাসের বিখ্যাত চরিত্র দেবী সিংহের নামে বর্ধন কুঠিতে রক্ষিত সফল রাজাদের নামের তালিকায় যোগ করা হয়েছিল।

১৯৭০ সালে দশ-শালা বন্দোবস্তের সময়কালে বর্ধন কুঠির একজন জমিদার বাকি খাজনার দায়ে বেহাত হয়ে যায়। বর্ধন কুঠির সর্বশেষ রাজা শৈলেশ চন্দ্র ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির সময় বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারত চলে যান। ঐতিহাসিক বর্ধন কুঠির রাজবংশের আলোচনার সূত্র ধরে অনায়াসে সমসাময়িক মুঘল শাসন ও শাসকদের সঙ্গে তৎকালীন বাংলার দেশীয় রাজন্যবর্গ-জমিদারদের সম্পর্কের বিষয়ে কিছু শ্রদ্ধেয় জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হয়।

 

বর্তমান অবস্থা

১৯৬৫ সালে এই জায়গায় গোবিন্দগঞ্জ কলেজ স্থাপিত হবার পরবর্তীতে কলেজের ক্যাম্পাসে ক্রমবিস্তার এবং বিভিন্ন কারণে উঁচু বর্ধন কুঠিরের প্রাচীন ভবনগুলো অবহেলায় ধ্বংসের প্রায় শেষ ধাপে এসে গেছে।

Exit mobile version