রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য

সুন্দরবনের পর দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের তিনটি বিট: কালেঙ্গা, রেমা আর ছনবাড়ী নিয়ে এই অভয়ারণ্য। শুকনো ও চিরহরিৎ এ বন উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ৪টি আদিবাসী সম্প্রদায়- টিপরা, সাঁওতাল, তেলুগু ও উড়ং এখানে বসবাস করে। রয়েছে আধাঘণ্টা, ১ ঘণ্টা ও ৩ ঘণ্টার ট্রেইল। ট্রেকিংয়ে সহায়তা করার জন্য বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদার গাইড রয়েছে। অভয়ারণ্যে আরো রয়েছে একটি পরিদর্শন টাওয়ার ও একটি কৃত্রিম লেক।

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য

জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র্যেসমৃদ্ধ। বর্তমানে এই বনে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা-লতাগুল্ম পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখির জন্য এই বন সুপরিচিত এবং এদের মধ্যে রয়েছে — ভীমরাজ, টিয়া, পাতি ময়না, লালমাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, রাজ ধনেশ, শকুন, কালো মথুরা, লাল বনমোরগ, প্যাঁচা, মাছরাঙ্গা, ঈগল, চিল প্রভৃতি।

এই বনে তিন প্রজাতির বানরের বাস, এগুলো হল: উল্টোলেজি বানর, লাল বান্দর ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর। তাছাড়া এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালী দেখা যায়। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি একমাত্র এ বনেই পাওয়া যায়। বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য আরও রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, দেশি বন শুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ইত্যাদি। শঙ্খচূড়, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা প্রভৃতি সহ এ বনে আঠারো প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়।

শকুনের নিরাপদ এলাকা-২ তফসিল অনুসারে রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য কোথায় অবস্থিত?

হবিগঞ্জ জেলাচুনারুঘাট উপজেলায় রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য  অবস্থিত। এটি ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়রপথে এর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। হবিগঞ্জ জেলায় বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের তিনটি বিট: কালেঙ্গা, রেমা আর ছনবাড়ী নিয়ে এই অভয়ারণ্য গঠিত।

কিভাবে রেমা-কালেঙ্গা যাওয়া যায়?

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে দু’ভাবে যাওয়া যায়। প্রথমটি হল হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিএনজি অথবা লোকাল বাসে চুনারুঘাট বাজার। অতঃপর সিএনজি কিংবা ভাড়ার মোটরসাইকেলে কালেঙ্গা। অন্য পথটি হলো শ্রীমঙ্গল থেকে জিপে বা কারে করে কালেঙ্গা। শ্রীমঙ্গল থেকে এই পথে গেলে জঙ্গলের ভেতরের সৌন্দর্য দেখতে ভালো লাগবে সবার।

যাতায়াতের মাধ্যম: বাস, মাইক্রোবাস, জীপ, সিএনজি ও ট্যাক্সি।

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য কখন যাবেন?

বর্ষা মৌসুমে রেমা-কালেঙ্গা ট্রেইল এবং যাওয়ার পথ অনেক কর্দমাক্ত থাকে তখন পথ চলতে অনেক অসুবিধা হয়। তাই শীতকালে রেমা-কালেঙ্গা ভ্রমণ করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

কালেঙ্গায় থাকার জন্য আছে বন বিভাগের বিশ্রামাগার। সেখানে অবস্থান করতে হলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে। তবে এই জায়গায় থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হল নিসর্গ তরফ হিল কটেজ। রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমের প্রধান প্রবেশ পথের পাশে অবস্থিত এ কটেজের তিনটি কক্ষে আট জন থাকা যায়। বড় দুটি কক্ষের ভাড়া এক হাজার টাকা আর ছোটটির ভাড়া ৭শ’ টাকা। প্রতিবেলা খাবারের খরচ জনপ্রতি ২শ’ টাকা। আর সকালের নাস্তা ৬০ টাকা। এ ছাড়া হবিগঞ্জ শহরে বা শ্রীমঙ্গলে হোটেলে থাকতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৮০০-২৫০০ টাকা। এছাড়া থাকতে পারবেন বাহুবল উপজেলাতে অবস্থিত ৫ তারকা রিসোর্ট প্যালেসে।

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment