‘খৈয়াছড়া’ বিস্ময় এক ঝর্ণা

শীতে বুনো ঝর্ণাগুলোর কাছে যাওয়া কিছুটা সহজতর হলেও তখন ঝর্ণাগুলোর প্রকৃত রূপের নাগাল পাওয়া যায় না। ঝর্ণার যৌবন দেখতে হয় বর্ষায় কালে অথবা এর পরে শরতে। অনেকের মতে এখন পর্যন্ত দেশের আবিষ্কৃত ঝরনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় খৈয়াছড়া। আকার আকৃতি ও গঠনশৈলীর দিক দিয়ে এটাই নিঃসন্দেহে এখনও পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা। মোট ৯টি মুল ধাপ এবং অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ প্রমাণ করে যে এমন আর একটা ঝর্ণাও বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা
পায়ের তলায় প্যাচপ্যাচে কাদা, হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি, পাথর, নুড়ি আর বালি বিছানো স্রোতস্বিনী ঝিরি, রক্তপিপাসু জোঁকের মুহুর্মুহু আক্রমণ এই উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে প্রকৃতির বিস্ময়কর এই ঝর্ণার। ঝিরি দিয়ে নেমে আসা পানির মাতাল অবস্থা দেখেই অনুভব করা যায় ঝর্ণার রূপ কি হতে পারে। খৈয়াছড়ার মূল ঝরনাটি কয়েকটি স্টেপ বা বড় বড় খাঁজে বিভক্ত। পাহাড়ের গা থেকে পানি গড়িয়ে শত শত বছর ধরে এই খাঁজগুলো তৈরি হয়েছে। মূল উৎসটি পাহাড়ের অনেক ওপরে। অনেক ভ্রমণপিপাসু প্রথম স্টেপটি দেখেই ফিরে যান। পাহাড়ের ওপরের দুর্গম পথটিতে আর ওঠেন না। কিন্তু এর আসল সৌন্দর্যটাই হল ওপরে। পাহাড় বেয়ে ঝরনার পাশ দিয়ে খাড়া রাস্তা উঠে গেছে ওপরের দিকে। শেষ স্টেপ পর্যন্ত না গেলে পুরো এডভেঞ্চারটি এক কথায় বৃথা হয়ে যায়। খৈয়াছড়ার শেষ স্টেপটি স্বৈর্গিক বললে অতিশয়োক্তি করা হয় না। নিরিবিলি পরিবেশ আর চারপাশে যতদূর চোখ যায়, ঘন অরণ্য। ওপর থেকে তাকালে নিচের দিকে প্রবহমান ঝরনার অপূর্ব একটা ভিউ পাওয়া যায়। শেষ ধাপটির পরেও ঝরনার ট্রেইল চলে গেছে পাহাড়ের আরও গভীরে।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা
খৈয়াছড়ার নয়টা ধাপের প্রতিটিতেই রয়েছে প্রশস্ত জায়গা, যেখানে তাঁবু টানিয়ে আরাম করে পূর্ণিমা রাত পার করে দেওয়া যায়। এছাড়া ঝর্ণার দুইপাশের পাহাড়ে রশি বেঁধে আনেকেই ঝুলে ঝর্ণা পার হয়ে থাকে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার আশেপাশে বানর আর হরিণের দেখা পাওয়া যায়।


খৈয়াছড়া ঝর্ণা ছাড়াও মীরসরাইয়ে দেখার মত আছে পরাগলপুর, শুভপুর ব্রিজ, মহামায়া, ধুমের শিলাপাথর, সেচ প্রকল্প ও লেক, উপকূলীয় বনাঞ্চল, মুহুরী সেচ প্রকল্প, করেরহাট বনাঞ্চল এবং বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্প।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা
যাতায়াত
ঢাকার দিক থেকে গেলে চট্টগ্রামের মিরসরাই পার হয়ে বারটাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে নামতে হবে। স্কুলের প্রায় ত্রিশ গজ আগে একটি রাস্তা ঢাকা চট্টগ্রাম রোড হতে ডান দিকে ঢুকেছে ঐ রাস্তায় ঢুকবেন না । ঐখান থেকে হাতের বাম দিকে গ্রামের রাস্তা ধরে দশ মিনিট হাঁটলে পথে রেললাইন পরবে, রেললাইন পার হয়ে আরো ১০ মিনিট হাঁটলে ঝিরি পাবেন । ইচ্ছে করলে ঢাকা চট্টগ্রাম রোড থেকে ঝিরি পর্যন্ত আপনি সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন । ঐখান থেকে আপনাকে খৈয়াছড়া ঝর্ণার মূল ট্র্যাকিং শুরু করতে হবে । ঝিরি

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

থেকে শেষ স্টেপ পর্যন্ত সোয়া দুই ঘণ্টার মত সময় লাগবে।


সর্তকতা
বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢল সমস্যার কারণ হতে পারে সেজন্য অবশ্যই দড়ি সাথে নিবেন, প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে। খৈয়াছড়া ঝর্ণা ট্র্যাকিং বাংলাদেশের অন্য ঝর্ণাগুলো থেকে একটু আলাদা। তাই সবসময় সতর্কতার সাথে পা ফেলতে হবে। সব চেয়ে ভালো হয় স্থানীয় কাউকে গাইড হিসাবে নিলে।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা
থাকা
সারা দিন ঘুরে রাতের বাসেই ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের পথ ধরতে পারেন। যদি থাকতে চান তাহলে উপজেলা কমপ্লেক্সের জেলা পরিষদের এবং করের হাটে বন বিভাগের ডাকবাংলো আছে। তবে এসব ডাকবাংলোতে থাকতে চাইলে আগে থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে। কাছাকাছির মধ্যে বেশ কিছু হোটেল এবং বোর্ডিং আছে বারইয়ারহাটে এবং সীতাকুণ্ডে। তবে সবচাইতে ভালো হয় চট্টগ্রামে থাকা।

Leave a Comment